বিশেষ প্রতিবেদক

দৈনিক বণিক বার্তার কক্সবাজার প্রতিনিধি ও ইয়ুথ এনভায়রণমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুনকে একটি সাজানো ও মিথ্যা মামলা থেকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সাথে কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্টের পূর্ব পাশে সৈকত পাড়াস্থ ডিসি পাহাড়ের সমস্ত স্থাপনা এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদ করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি আদালতকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন একই আদালত। ৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুছ জামান এর বেঞ্চ এ নির্দেশনা দেন। সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল মামুনের পক্ষে আদালতে মামলার শুনানী করেন এডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সাঈদ আহমেদ কবির।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মিনহাজুল হক চৌধুরী বলেন,‘ এ নির্দেশনাটি ঐতিহাসিক। কারণ আদালতের এ নির্দেশনার ফলে একজন পরিবেশকর্মী ও সাংবাদিকের অধিকার ফিরে পেয়েছেন অপরদিকে পর্যটন এলাকার সৌন্দর্যের প্রতীক গুরুত্বপূর্ণ একটি পাহাড় সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

জানাযায়, কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্টের পূর্ব পাশে সৈকত পাড়াস্থ ডিসি পাহাড়ের প্রায় ৫০ একর জমি দখল করে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ করে আসছে একটি সিন্ডিকেট। এ পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে দৈনিক বণিক বার্তায় সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি পরিবেশ সংগঠন ইয়েস কক্সবাজারের পক্ষ থেকে গত ১৭ এপ্রিল স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ ছাড়া কলাতলী এলাকায় পাহাড় কেটে গড়ে উঠা উত্তরণ আবাসন প্রকল্পের নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিরুদ্ধে দূদকে অভিযোগ করেন ইব্রাহিম খলিল মামুন।

মামুনের অভিযোগ-‘এতেই ক্ষুদ্ধ হয়ে গত ১৯ মে জহুরা বেগম নামের এক বিধবা মহিলাকে বাদি সাজিয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি সাজানো ও মিথ্যা মামলা দায়ের করেন পরিবেশ বিরোধীরা। অথচ ওই দিন আমি বাংলাদেশ নদী পরিভ্রাজক দলের সাথে খাঘড়াছড়ি গিয়েছিলাম।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে অবস্থিত উত্তরণ আবাসন প্রকল্পের নামে খাসজমি দখল করে বিভিন্ন লোকজনের কাছে বিক্রির অভিযোগ ওঠায় ইয়েস কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুনের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৫ নভেম্বর এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়ে কক্সবাজারের ডিসির কাছে চিঠি দেন দুদকের পরিচালক (বি. অনু. ও তদন্ত-১) একেএম জায়েদ হোসেন খান। চিঠি পাওয়ার পর পরই অভিযোগ তদন্তে আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন কক্সবাজারের তৎকালীন ডিসি মো. আলী হোসেন। কমিটি প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি, রাজস্ব) কাজী আব্দুর রহমানকে। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিনকে এ কমিটির সদস্য সচিব করা হয়। কমিটিতে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের কানুনগো, সার্ভেয়ার ও সদর ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তাকে সদস্য করা হয়। কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরির পর ১১ ফেব্রুয়ারি তা দুদকের কাছে পাঠানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয় কক্সবাজার উত্তরণ গৃহায়ণ সমবায় সমিতির ‘উত্তরণ আবাসন প্রকল্প’র দখলে বর্তমানে ৯৮ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ একর জমি ১৯৮৯ সালে ৩০ বছরের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ইজারা নেয়া হয়। তবে ইজারার শর্তভঙ্গের দায়ে পরের বছরই ভূমি মন্ত্রণালয় ওই বন্দোবস্তি বাতিল করে। কিন্তু এ বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। ১৬ একর জমি একাধিক লোকজনের কাছ থেকে ক্রয় করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে বাকি ৪৭ একরের পুরোটাই সরকারি। এ খাসজমি তারা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এ আবাসন প্রকল্প পুরোটাই পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে। একসময় এ এলাকায় বনে হরিণ, হাতি, মেছোবাঘ, শিয়ালসহ বিভিন্ন বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিচরণ করত। আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য ২০০৫ সাল থেকে ওই এলাকায় পাহাড় কাটা শুরু করে কক্সবাজার উত্তরণ গৃহায়ণ সমবায় সমিতি। ১০০ থেকে ১৫০ ফুট উচ্চতার ভূমি সমতল করে এ পর্যন্ত ধ্বংস করা হয়েছে ৫২ হাজার ৫০০ বর্গফুট পাহাড়ি এলাকা। ফলে ওই এলাকা থেকে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির প্রাণী হারিয়ে গেছে। পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশের।